Saturday, November 14, 2015

বাড়ির ছাদে বাগান করুন


বিভিন্ন দেশের শহরগুলোর বাড়ির ছাদে আজকাল বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।  আমাদের দেশেও বিভিন্ন বাড়ির ছাদে এখন বাগান করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে  বিভিন্ন বাড়ির ছাদে বাগান চোখে পড়ে।  অনেকেই বাড়ির ছাদে বাগান করতে আগ্রহী।কিন্তু কিভাবে নিজের বাড়ির ছাদে বাগান করবেন, তার দিক-নির্দেশনা বা তথ্য না জানার কারণে শখকে শুধু মনের ভেতরে লালন করে যাচ্ছেন। তাই আগ্রহীদের জন্য ছাদে বাগান করার যাবতীয় বিষয় তুলে ধরা হলো।
পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলকনীতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ফুল, ফল, শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলা যায়।তবে ছাদে বাগান বানানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে বাগান করার জন্য ছাদের কোন প্রকার ক্ষতি যেন না হয়।
garden
ছাদে বাগান দু’ভাগে করা যায়। যেমন কাঠ বা লোহার ফ্রেমে এঁটে বেড তৈরি করে এবং অন্যটি হলো টব, ড্রাম, পট কনটেইনার এসব ব্যবহার করে। প্রথম ক্ষেত্রে পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্নিশের পার্শ্বে বা আলাদা ফ্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে সেটিং করা যায়। এ ক্ষেত্রে জল ছাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জল ছাদ না থাকলে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে এর ওপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে এতে মাটি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে মাটির পুরুত্ব যত বেশি হবে, গাছ তত ভাল হবে। অন্তত দু’ফুট পুরু মাটির স্তর থাকতে হবে। অতিরিক্ত পানি, সার পাবার সুষ্ঠু পথ রাখতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে কাঠ, লোহা, স্টিল, মোটা রাবার এসব ব্যবহার করা যায়। তবে যা কিছু দিয়ে বা যেভাবেই বেড তৈরি হোক না কেন ৩/৪ বছর পর পুরো বেড ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে। এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ছাদে বাগানের জন্য শুরুতেই যদি মাটিকে ফরমালডিহাইড দিয়ে (প্রতি লিটার পানির সাথে ১০০ মিলিলিটার ফরমালডিহাইড) শোধন করে নেওয়া যায় তবে ভাল হয়।garden-1

মাটি শোধনের কৌশল হচ্ছে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি নিয়ে বর্ণিত মাত্রায় ফরমালডিহাইড মিশ্রিত পানি মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে পুরো মাটিকে মোটা পলিথিন দিয়ে ৩/৪ দিন ঢেকে রাখতে হবে। পরে পলিথিন উঠিয়ে সূর্যের আলোর তাপে খুলে রাখতে হবে পরবর্তী ৩/৪ দিন পর্যন্ত। ফরমালিনের গন্ধ শেষ হয়ে গেলেই মাটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতির মধ্যে আছে ড্রাম, বালতি, টব, কনটেইনার। এসবের যেকোন একটি বা দুটি নির্বাচন করার পর পাত্রের তলায় কিছু পরিমাণ খোয়া (ইট পাথরের কণা) দিতে হবে। ইটের খোয়া পানি নিষ্কাশন এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া
এবং পাত্রের ভেতরে বাতাস চলাচলের সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রেও অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক পঁচা জৈব সারের মিশ্রণ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয়, তত ভালো। কেননা ফল গাছের শেকড় প্রকৃতিগতভাবে বেশ গভীরে যায়। কিন্তু ড্রাম/টব/পাত্রে সীমিত জায়গার অভাবে যথাযথভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না। সে জন্য ছাদের বাগানে টব/ড্রামের আকার যত বড় হয় তত ভালো হয়। টবে/ড্রামে গাছে/ জাত নির্বাচনের পর য়ৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে। যেমন বড় গাছ পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে না দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর পাশে দিতে হবে। এতে আলো বাতাস রোদ ভালোভাবে পাবে। তাছাড়া ছোট বড় জাতের মিশ্রণ করে সেটিং করলে গাছের গাত্র বৃদ্ধিসহ  বাড়তি ভালো হয়। আরেকটি হলো ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে ফল চাষাবাদে কলমের ও হাইব্রিড জাতের ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।
OLYMPUS DIGITAL CAMERAতৃতীয় আরেকটি পদ্ধতি অনেকেই অনুসরণ করে। সুন্দরভাবে বাঁশ/পিলার রড দিয়ে জাংলো বা মাচা বানিয়ে টব/প্লাস্টিকের পাত্রে ফুল, বাহারী গাছ গাছালী, অর্কিড আবাদ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ঝুলন্ত টব/পাত্র মাঝখানে না ঝুলিয়ে পাশে ডিজাইন করে সেটিং করলে জায়গার সদ্ব্যবহার করা যায়, দেখতেও সুন্দর লাগে।
যেভাবে করবেনঃ মাটি তো নেই, বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের। কিন্তু গাছ তো দরকার। তাই শেষ ভরসা বাড়ির ছাদ। সেখানেই ফুল, সেখানেই ফল। পৃথিবীর অনেক দেশে এখন ছাদে বাগান করা সে দেশের সিটি করপোরেশনের বাধ্যতামূলক আইন। শহরের ইট-পাথর যেন সবুজের স্পর্শ পায়, আমাদের দেশে সেসবের বালাই নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে দুই-একটা ছাদ বাগান হয়েছে। কিন্তু নির্মল পরিবেশের জন্য যা খুবই কম। ছাদে বাগান আর মাটিতে বাগান এক বিষয় নয়, আবার কাজটি যে কঠিন, তাও নয়। জানা দরকার, ছাদের উপযোগী গাছ কোনগুলো। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই গাছটি ছাদ-বাগানের জন্য তা হাফ ড্রাম, টব নাকি চৌবাচ্চা কাঠামো করে লাগানো হবে এবং এসব গাছের জন্য পরিচর্যার ধরণ কী হবে, তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। খোলামেলা ছাদ থাকলেই হলো। স্থায়ী বাগান করার জন্য ছাদে সিমেন্টের স্থায়ী টব তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। গরুর নান্দার মতো বাজারে সিমেন্টের টব কিনতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে উত্তম হয় লোহার হাফ ব্যারেল হলে। ব্যারেলের দুই পাশে হাতল থাকতে হবে। এর সুবিধা হচ্ছে টবটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরানো যাবে। টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি। কয়েকটি ভাঙা চাড়ি ছিদ্রের মুখে দিয়ে মাটি ভরতে হবে। তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার আর এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে টব পূর্ণ করুন। garden3বর্ষার আগে আগে টবে চারা কলম লাগাতে হবে। এই টবে ফুল, ফল, সবজির চাষ করা যেতে পারে। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, দোলনচাঁপা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ইউফোরবিয়াসহ মৌসুমি সব ফুলেরই চাষ করা সম্ভব। ছাদ বাগানে সবজিও ফলতে পারে। বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, শসা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, বরবটি, সিম, ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি টবে ফলানো সম্ভব। ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, শরিফা, সফেদা, কামরাঙ্গা, বাতাবিলেবু, জলপাই, কদবেল, ডালিম, পেয়ারা, কমলা, মালটা, কুল ছাদ বাগানকে আকর্ষণীয়, অনন্য করে তুলতে পারে। আজকাল অনেকেই ছাদ বাগান করার জন্য এগিয়ে আসছেন। তবে ছাদে ফল গাছ লাগানোর প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছোট একটি টবে ফল ধরলে যেমন দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি ছাদে প্রচুর পরিমাণ রোদ লাগে বলে ফলও ভালো হয়।
ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি
ক) হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
খ) ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
গ) ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ঘ) সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিযে ভর্তি করে নিতে হবে।
ঙ) ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড়গুলো কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন  ভেঙ্গে না যায়।
চ) রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
ছ) রোপনের পর  গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
জ) সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঝ) রোপনের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।
ঞ) গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
ট) গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
ছাদে বাগানের গুরুত্ব
(ক) টাটকা শাক-সবজি ও ফল-মূল পাওয়ার জন্য,
(খ)  বাড়তি আয় ও অবসর সময় কাটানোর জন্য ,
(গ)  কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য,
(ঘ)  ছাদের সবুজ চত্বরে বিনোদনের সুবিধা পাওয়ার জন্য,
(ঙ)  পরিবেশ দুষণ মুক্ত রাখার জন্য,
(চ)  বায়ো ডাইভারসিটি সংরক্ষণের জন্য,
(ছ)  অবকাঠামো তৈরিতে যে পরিমাণ জমি নষ্ট হয় ছাদে বাগানের মাধ্যমে তার কিছু অংশ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য,
(জ)  বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য,
(ঝ)  গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওযার জন্য,
(ঞ)  ছাদের ইনসুলেশনের জন্য।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More